মডেল: ইশা। ছবি: সুমন ইউসুফ

আপনি বই ভালোবাসেন। বই পড়তে চান। কিন্তু ‘ব্যস্ততার অজুহাতে’ হয়তো পড়া হয় না। সে ক্ষেত্রে এই পরামর্শগুলো আপনার জন্যই। জেনে রাখুন, বিল গেটস, মার্ক জাকারবার্গ থেকে শুরু করে বারাক ওবামা, অপরাহ্ উইনফ্রের মতো মানুষেরা শত ব্যস্ততার মধ্যেও কিন্তু নিয়মিত বই পড়েন। মলাটবন্দী বইয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, কিন্ডলের মতো ডিজিটাল মাধ্যমে পাঠাভ্যাসও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। চলুন জেনে নিই, কেমন করে আপনার ভেতরের ‘বইয়ের পোকাটাকে’ জাগিয়ে রাখবেন।
১.নিয়মিত পড়ুন
প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় বের করে বই পড়ুন। আপনার কাজের ব্যস্ততার সঙ্গে মিলিয়ে সেটা যেকোনো সময়ে হতে পারে, পছন্দের যেকোনো বিষয়ের ওপর লেখা বই হতে পারে। সকালে ঘুম থেকে উঠে ১৫ মিনিট সময় বই পড়ার পেছনে ব্যয় করতে পারেন। কিংবা রাতে বিছানায় শুয়েই না হয় খানিকক্ষণ বই পড়ুন। শুরুতে প্রতিদিন ১০-২০ পৃষ্ঠা করে পড়তে পারেন। দেখবেন ধীরে ধীরে লক্ষ্যটা বাড়তে থাকবে। আপনার প্রতিদিনের রুটিনের মধ্যেই ‘বই পড়া’ যোগ করে নিন।
২.সঙ্গে একটা বই রাখুন
হিসাব করে দেখুন, প্রতিদিন কতখানি সময় আপনার অপচয় হয়। হয়তো যানজটে বসে আছেন, হয়তো কোনো বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করছেন, ক্লাস বা মিটিং শুরু হতে দেরি হচ্ছে—এ সময়গুলোতে চমৎকার সঙ্গী হতে পারে বই। যদি ব্যাগ বহন করার অভ্যাস থাকে, ব্যাগের ভেতর একটা বই রাখুন। সুযোগ পেলেই দু-চার পাতা পড়ে ফেলতে পারেন।
৩.বই নিয়ে কথা বলুন
যেকোনো অভ্যাস গড়ার ক্ষেত্রে বন্ধুরা একটা বড় ভূমিকা রাখেন। যে বইটা এখন পড়ছেন বা সদ্য পড়ে শেষ করলেন, সেটা নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলুন। আমরা অনেক বই-ই পড়ার পর ভুলে যাই। আলোচনা হলে ঘটনাগুলো মনে থাকে। কোনো বইপড়ুয়া সংগঠনে যোগ দিতে পারেন। এমনকি ফেসবুকে বইপড়ুয়াদের বিভিন্ন গ্রুপ আছে। সেখানে বিভিন্ন বই নিয়ে আলাপ জমে ওঠে। যে বইটা পড়েছেন, বন্ধুদেরও সে বইয়ের প্রতি আগ্রহী করুন। তবেই না বন্ধুর সঙ্গে আড্ডাটা জমবে!
৪.ধৈর্য রাখুন
রাতারাতি কেউ পাঠক হয়ে ওঠে না। তাই অল্প কয়েক পৃষ্ঠা পড়েই ‘বইটা পড়ব নাকি পড়ব না’—এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবেন না। একটা বইয়ের ভেতর ঢুকতে হলে কমপক্ষে ১০ পৃষ্ঠা আপনাকে পড়তেই হবে। তাই এক বসায় অন্তত ১০ পৃষ্ঠা পড়ুন। মোটা একটা বই দেখে ‘এটা তো পড়ে শেষ করতে পারব না’ ভেবে আগেই ঘাবড়ে যাবেন না। শুরু করুন। হয়তো গল্পটাই আপনাকে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা টেনে নিয়ে যাবে!
৫.পাঠ্যবইকে রঙিন মাত্রা দিন
ফিন্যান্স, অ্যাকাউন্টিং থেকে শুরু গণিত, রসায়নের ওপর আমাদের অনেক বই বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আমরা ছকে বাঁধা বইগুলোই পড়ি। অনলাইনে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করলেই দেখবেন, একই বিষয়ের হাজারটা মজার বই পাবেন। নীরস পাঠ্যসূচিতে আনন্দ আনতে ভিজ্যুয়াল বই, অডিও বই কিংবা ইনফোগ্রাফিকস-সমৃদ্ধ বই পড়তে পারেন। এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো ক্লাসের পড়াও হবে, আবার নতুন কিছু জানার সুযোগও পাবেন। ইনফোগ্রাফিক্স সমৃদ্ধ বই পড়তে পারেন। এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারার মত ক্লাসের পড়াও হবে, আবার নতুন কিছুও জানার সুযোগ পাবেন।
৬. দক্ষতা বিকাশে বই
হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউতে লেখক জন কোলম্যান লিখেছেন, ‘বই পড়ার কারণেই আপনি নিজেকে সামাজিক ও পেশাগত যোগাযোগে দক্ষ করে তুলতে পারেন।’ বই থেকে যা জানবেন তা অন্যদের জানানোর সুযোগ নিন। গল্প-আড্ডা, কিংবা ক্লাস প্রেজেন্টেশনের বইয়ের রেফারেন্স দিয়ে নিজের যোগাযোগ দক্ষতার শক্তির প্রমাণ দিতে পারেন।
৭.নানা ধরনের বই পড়ুন
সব সময় একই ঘরানার বই পড়ার অভ্যাস করবেন না। স্ট্যানফোর্ড গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব বিজনেসের শিক্ষক স্কটি ম্যাকলেনান বলেন, দক্ষ নেতৃত্ব শেখা ও বিকাশের জন্য উপন্যাস পড়ার বিকল্প নেই। শুধু ব্যবসা-সংক্রান্ত বই পড়া বাস্তবে যতটা কাজে লাগে, ভিন্নধারার উপন্যাস পড়লে তার চেয়ে বেশি কাজে আসে। নিজের পছন্দের বিষয়গুলো নিজেই আবিষ্কার করুন।
৮.সপ্তাহে অন্তত একটি নতুন বই
একটি বই অনেক দিন ধরে পড়ার চেয়ে প্রতি সপ্তাহে একটি করে বই পড়া শেষ করুন। বিল গেটস সপ্তাহে একটি করে বই পড়েন। মার্ক জাকারবার্গ প্রতি দুই সপ্তাহে একটি করে বই পড়ে ফেলেন। সপ্তাহ শেষে আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে একটা বই থেকে পাওয়া জ্ঞান যোগ হোক।
৯.টাকা জমিয়ে বই কিনুন
ছোটবেলায় অনেকেরই বই সংগ্রহের শখ থাকে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে পড়াশোনার চাপে সেই অভ্যাসটা হারিয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে একটা বই পছন্দ হলে সেটা কিনে ফেলুন। টাকা জমিয়ে বই কিনুন। জমানো টাকায় কেনা বই পড়ে শেষ করার একটা চাপ অনুভব করবেন। আবার পড়া শেষ হলে বন্ধু কিংবা ছোটদের পড়তে দিতে পারেন। বইটা বুকশেলফে আটকে না রেখে সেটাকে অনেকের হাতে ঘোরাঘুরির সুযোগ দিন।
১০.ডিজিটাল মাধ্যমে পড়ুন
যদি মনে হয় ডিজিটাল মাধ্যমে বই পড়তে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তবে তা-ই করুন। মোবাইল, ল্যাপটপে ই-বুক পড়তে পারেন। গুগল অ্যাপে বইপড়ুয়াদের জন্য প্রচুর অ্যাপ পাবেন। কিন্ডলে (বই পড়ার উপযোগী ডিজিটাল যন্ত্র) বই পড়াও হয়তো আপনার কাছে আনন্দদায়ক মনে হতে পারে।
বিজনেস ইনসাইডারে প্রকাশিত তানজা লডেনব্যাকের লেখা অবলম্বনে জাহিদ হোসাইন খান