অনেক পাঠক মনে করেন, বাঙালির নাকি বইয়ের প্রতি আগ্রহ (বই পড়া) দিন দিন কমে যাচ্ছে। ইন্টারনেট বুক, নিত্যদিনের ব্যস্ততাকে বই পড়ার অভ্যাস কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে দুষছেন। আসলে ব্যাপারটি মোটেও সত্যি নয়। বই পড়ুয়াদের বইয়ের প্রতি আগ্রহ মোটেও কমেনি। শুধু তা-ই নয়, তারা অনেকেই বাড়িতে একটা ছোটখাটো বই পড়ার ঘরেরও ব্যবস্থা করেন।
বইয়ের সঙ্গে পড়ুয়াদের সখ্যতা আদিকালের। তবে আগের দিনের মানুষ আজকালের মতো শৌখিন ছিল না। তখন বইগুলোকে আলমারি বা শো-কেসের ওপর-ভিতরে সাজিয়ে রাখত। দিন পাল্টেছে। অন্দর সজ্জায় ডিজাইনার তাক (ডিসপ্লে ইউনিট) বা সেলফ এখন বেশ জনপ্রিয়। আমাদের দেশের আসবাবপত্র তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে নানা নকশার বুক শেলফ আনছে। অনেক ইন্টোরিয়র ডিজাইনার দেয়ালে চমকপ্রদ ডিসপ্লে ইউনিট তৈরি করে বই সাজানোর ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। তবে তাক হোক বা বুক শেলফ, নান্দনিক আসবাব তৈরির ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উচিত।
অন্দর বড় হলে কোনো সমস্যা নেই। অনায়াসে একটি ঘর লাইব্রেরি হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। সেই ঘরের দেয়ালজুড়ে রাখতে পারেন বই রাখার ব্যবস্থা। কিছু বই খোলা রাখলেন আবার কিছু বই বন্ধ আলমারিতে। চাইলে ক্যাটালগ করেও রাখতে পারেন। এতে বই খুঁজে পেতে সুবিধাও হবে। আবার অন্দর ছোট হলে শেলফ হিসেবে দেয়ালই ভরসা। এক্ষেত্রে আলাদা কোনো দেয়াল নয়, ঘরের ফাঁকা দেয়ালগুলোতেও বানাতে পারেন এমন নান্দনিক নকশার বইয়ের তাক।
বসার ঘরের কোনো এক দেওয়ালে ঝকমকে গ্রন্থাগার তাই তৈরি করে নেওয়াই যায়। ডিসপ্লে ইউনিটের সঙ্গে বই রাখার র‌্যাক তৈরি করে নেওয়া যায়। ছোট থেকে বড় একটু কাঠের চৌকো একটা চওড়া ফ্রেম বানিয়ে নিন। এবার সেগুলো ঠিক যেমন দেয়ালে পেইন্টিং ঝোলায়, সেরকমভাবে ছোট থেকে বড় পরপর দেয়ালে টাঙিয়ে নিলেন। এবার তাতে বই রাখুন। পুরো ব্যাপারটাকে দেখে যেন মনে হয় দেয়ালে বুঝি পরপর অনেক পেইন্টিং ঝোলানো রয়েছে। আজকাল নতুন নতুন ফ্ল্যাট বাড়িগুলোর জানালার নিচে ছোট ছোট বাক্স থাকে। যা বাইরে পাল্লা দিয়ে ভিতরে জিনিসপত্র রাখা হয়। এই জানালার নিচের জায়গাগুলোকে বই রাখার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা যেতেই পারে।
এছাড়া ডুপলেক্স বাড়িগুলোর সিঁড়ির নিচ, বাড়ির এই অংশটা চিরকাল অবহেলার জায়গা। কিন্তু সিঁড়ির নিচে যদি ঠিকঠাক জায়গা থাকে তাহলে সুন্দর বইয়ের র‌্যাক বা শেলফ বানিয়ে নেওয়া যায়। মেঝেতে গদি পেতে বা লো হাইট বসার ব্যবস্থাও করে নেওয়া যেতে পারে। চিলেকোঠার ঘরে একটি ছোট্ট বইঘর বানিয়ে নেওয়ার দারুণ জায়গা। ফ্ল্যাট বা বাড়ির অতিরিক্ত ঘরকে বইঘর হিসেবেও বানিয়ে নেওয়া যায়। পড়াশোনাও চলল, অতিথি কেউ এলে বসবাসের জন্যও ছেড়ে দেওয়া গেল।
তবে যাই হোক, তাতে থাকতে হবে শৈল্পিকতার ছোঁয়া। সেক্ষেত্রে নিজস্ব কোনো পছন্দের ডিজাইন থাকলে দক্ষ কারিগরের সাহায্যে বানিয়ে নিন। এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে, ডিজাইন যত জটিল হবে বই তত কম ধরবে।